বৈষয়িক সফলতা (যেমন, রেজাল্ট) কখনই মেধার মানদণ্ড নয়। শিক্ষা এবং পরীক্ষা পদ্ধতির ব্যাপক রদবদল প্রয়োজন

follow-upnews
0 0

EXAM_System_-_Activated


* ধরুণ, দুইজন ছাত্র ইন্টার পাস করেছ। সুবিধারথে ধরে নিই- উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্টও দুইজনের একই। দুইজনই ঢাকায় এসেছে ভরতি পরীক্ষার জন্য। একজনের বাড়ি থেকে মাসে হরলিক্স এবং ফল কেনার বাজেটসহ টাকা আসে। আরেকজনে ধান্দা করছে কীভাবে টাকা উপারজন করে বাড়ি পাঠানো যায়। একজনে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে রিফ্রেসমেন্টের জন্য আড্ডা দিয়েছে, আরেকজন টিউসনি এবং আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে ভরতি পরীক্ষার জন্য একটু আধটু পড়েছে। ভরতি পরীক্ষা হলো। পরীক্ষায় ফলাফলে দুইজনেই চান্স পেল। দুইজনেই ম্যাথে ভরতি হলো। বিষয়টা কী দাঁড়াল? দুইজনেই এখন একই মানের স্টুডেন্ট হিসেবে বিবেচিত হবে। এখন যদি ঐ ছাত্রটি চান্স না পেত তাহলে সে খারাপ ছিাত্র হিসেবে বিবেচিত হত। প্রয়োজনীয় সুবিধাদির অভাবে ভাল ছাত্র চান্স পায় না এমন নজির আছে ভুরি ভুরি। কেউ ব্যাকগ্রাউন্ড তলিয়ে দেখে না।
* এবার আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার কথাই। সবাই জানেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সিলেবাস মুখস্থ করায়। এখন যার মুখস্থ করার ইচ্ছে এবং সময় আছে সে পড়ে পড়ে ভাল রেজাল্ট করল। এবং যেহেতু তার আরথিক আবস্থা ভাল, তাই শিক্ষকদের পিছনে সময় দেওয়ার সময়ও পেল, যেহেতু সে কম মেধাবী (মানে বেশি চালাক) তাই ধান্দাবাজিও করতে পারলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে গেল। অতএব বিশ্ববিদ্যালয় তার বিভাগের সেরা ছাত্র বা ছাত্রিটিকে শিক্ষক হিসেবে পেল না।
উদাহরণ-
১। অামার এলাকায় একজন ছাত্র আছে, সে ভ্যান চালিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। রেজাল্ট ভালই করছে। তবে যথেষ্ট ভাল নয়। কিছুটা ইগো প্রব্লেম [থাকা ভাল, তবে সবক্ষেত্রে নয়] আছে। কিছু হেল্প করতে চাইলাম কিন্তু সে নিতে রাজি হল না। তার স্বনিরভরাতকে স্যালুট জানাই, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই ছাত্রটি এভাবে বেশিদূর যেতে হয়ত পারবে না। অচিরেই সে পরিস্থিতিরি কারণে কারাপ ছাত্রে পরেণত হবে।
২। বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বড় ভাইয়ের কথা বলছি, উনি ছিলেন আমার দেখা অন্যতম সেরা ছাত্র। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পড়াশুনা ধারকাছ দিয়ে আর গেলেন না। নষ্ট রাজনীতি থেকে ফায়দা নেওয়ার মতও তিনি ছিলেন না, যথারীতি ঝরে গেলেন। এই জীবনে গুটি কয়েক অতি পরিচিত মানুষ ছাড়া ওনাকে আর কেউ মেধাবী বলবে না।

** বিশ্লেষণে বিভিন্ন মাত্রা ব্যবহার করা যায়। অনেকে বলবেন এটাতো বাস্তবতা, কী করার আছে? করার অবশ্যই আছে। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতির ক্ষেত্রে রেজাল্টের পাশাপাশি আরো অনেক বিষয় গুরুত্ব পায়, তার ব্যাকগ্রাউন্ড দেখা হয়, তার একস্ট্রা কারিকুলার একটিভিটিস দেখা হয়। এক্ষেত্রে ভাইভা সিস্টেম খুব গুরুত্বপূরণ। সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দেশে ভাইভা যারা নেয় তারাই ট্রেইন্ড আপ নয়। অামাদের মত দরিদ্র এবং দুর্ীতিগ্রস্থ দেশে ভাইভা সিস্টেমের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। এক্ষেত্র যেটা করা যেতে পারে-

১। স্কুলে দরিদ্র শিক্ষার্ীদের জন্য পরযাপ্ত মেধাবৃত্তি চালু করা;
২। ভরতি পরীক্ষার ক্ষেত্রে গ্রামের স্কুল থেকে পাস করা শিক্ষার্ীদের রেজাল্ট আলাদাভাবে মূল্যয়ান করা। গ্রামের এ = শহরের এ+ ধরা যেতে পারে, বা অন্যকোনভাবে;
৩। ভরতি পরীক্ষায় কোচিং বন্দ করা। কোচিং বন্দ করা সম্ভব না হলে, প্রশ্নপদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবরতন আনা, যাতে কোচিংকে যথাসম্ভব পাশ কাটানো যায়;
৪। মেধাবৃত্তি অনার্সে ভর্তির আগ পরযন্ত চালিয়ে যাওয়া;
৫। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিভাগের যতজন শিক্ষার্ী ভর্তি হলো বিভিন্ন চলকের ভিত্তিতে তাদের উপর একিট গবেষণা [জরিপ] পরিচলানা করে দশজন শিক্ষর্ীকে আরথিক সুবিধা দেওয়া এবং কাক্ঙিখত রেজাল্ট করলে বৃত্তি চালু রাখা। নইলে তা অন্যকে দিয়ে দেওয়া;
৬। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে এবং পরীক্ষা পদ্ধিতিতে ব্যাপক রদবদল আনা, যাতে প্রিকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীরা নিজেকে অ্যাডজাস্ট করতে পারে;
৭। যে যে বিষয়েই পড়ুক না কেন, গাণিতিক দক্ষতার উপর একশো মারকস রাখা উচিৎ, বিভিন্ন রকমের মানুসিক দক্ষতার প্রশ্ন দিয়ে এ কোরস প্লানটি করা যেতে পারে;
৮। অনার্স যে যে বিষয়েই পড়ুক না কেন, মাস্টারস উন্মুক্ত রাখা। ম্যাথে অনার্স শেষ করে কারো মনে হতে সে সাহিত্য পড়বে। তার জন্য পড়ার সুযোগ থাকা উচিৎ এবং শিক্ষক হওয়ার সুযোগও থাকা উচিৎ। তবে কেউ যদি মনে করে বাংলায় অনার্স করে ম্যাথে মাস্টারস করতে চায় টেকনিক্যাল কারণে সেটি বাস্তব সম্মত নয়;
৯। পরীক্ষার পাশাপাশি প্রেজেন্টেসনের উপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরী। বিষয়ের উপর ছোট ছোট আইডিয়া তৈরি করতে বলে চিন্তাশক্তি যাচাই করা যা; ইত্যাদি।

Next Post

আগামী বইমেলায় আসছে পাঁচটি বই

দিব্যেন্দু দ্বীপ । Dibbendu Dwip